
উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়কগুলোতে দিনে-রাতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মাটি খেকো ব্যবসায়ীদের ১০ চাকার ডাম্প ট্রাক। যার ফলে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ এই সড়ক দ্রুত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মরিচ্যা-বড়বিল সড়ক, মরিচ্যা-পাতাবাড়ি সড়ক, ঘাটিরপাড়া-কোর্ট বাজার, ভালুকিয়ার গ্রামের সড়কগুলোতে ১০ চাকার মাটিভর্তি যানবাহন চলাচল করছে বেশি। দিনে রাতে ফলে সড়কগুলোর বেহালদশায় পরিণত হয়েছে। এসব সড়কের দুইপাশ হেলে যাওয়ার পাশাপাশি সৃষ্টি হচ্ছে ছোট-ছোট গর্ত।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গ্রামীণ এই সড়কগুলো ১০ চাকার ভারী যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। তারা বলছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আগামী বর্ষায় সড়কগুলোতে জনভোগান্তি বাড়বে, ব্যাঘাত ঘটাতে পারে যান চলাচলের।
এদিকে গেল ১১ মার্চ হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের নলবনিয়া এলাকার জনসাধারণ ও জনপ্রতিনিধিরা জড়ো হয়ে গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করে। এসময় ১০ চাকাবাহী গাড়ির চালকদের বোঝানো হয় এসব ভারী যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী এই সড়ক দিয়ে। এসব সড়কে যান চলাচল করলে সড়কটি দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে।
স্থানীয় ভালুকিয়ার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম চৌধুরী ও শহিদুল ইসলাম জানান, আমাদের সড়কে ১০ চাকার ভারী যানবাহন চলাচল করার কারণে সড়ক গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।এসব মাটিভর্তি ডাম্প ট্রাক গুলো নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের ফাত্রাঝিরি, সোনাইছড়ি ইউনিয়নে এবং উখিয়ার পাহাড়ি এবং সমতল জমির টপসয়েল নিয়ে আসছে।যা বিভিন্ন প্রকল্প, ইটভাটা এবং ভরাট কাজে বিক্রি করছে।
মুফতি ফজল করিম জানান, আমরা অনেক দিন পরে এরকম একটা পাকা সড়ক পেয়েছি। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, আমাদের গ্রামের ছোট ছোট সড়কে ১০ চাকার ভারী যানবাহন চলাচল করছে। ফলে নতুন সড়কে গর্ত সৃষ্টি ও ফাটল দেখা দিচ্ছে। তাই প্রশাসনের নিকট আবেদন থাকবে, এসব সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ইজিবাইক চালক শামসুল আলম ও মুস্তাক মিয়া জানান, এই সড়কে ১০ চাকার ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া ধুলাবালিতে স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়।
হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল বাদশা বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে হলদিয়া-পাতাবাড়ী সড়কে ১০ চাকার ভারী যানবাহন চলাচল করছে। যার কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। স্কুল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিতে রয়েছে। আমাদের এই সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করলে বর্ষায় সড়কটি দেবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জনগণের দাবি, গ্রামীণ সড়কে মাটি ভর্তি ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হোক।
এদিকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পাশের ঘুমধুম ও সোনাইছড়ি এবং হলদিয়াপালংয়ে মাটি ব্যবসায় আওয়ামী লীগ, বিএনপির একাধিক সিন্ডিকেট জড়িত। তাদের নেতৃত্বে রাত বিরাতে মাটিবাহী গাড়িগুলো চলাচল করে সড়কগুলোতে।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরওয়ার জাহান চৌধুরী ১০ চাকার ডাম্পার চলাচল নিয়ে চরম ক্ষোভ করেছেন । তিনি বলেন, ‘যারা গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ১০ চাকার মাটি ভর্তি ভারী যানবাহন দিয়ে সড়কের ক্ষতি করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন, তাদেরকে এলাকাবাসীরা মিলে প্রতিহত করুন। গাড়িগুলো আটকে রেখে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করুন। তিনি আরো বলেন, ‘যারা রাস্তার ক্ষতি করে ব্যবসা করছে তারা অপরাধী তাদেরকে চিহ্নিত করে রাখুন, তারা এলাকার শত্রু, এ জনপদের মাটির শত্রু,তারা দেশের শত্রু।বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নিতে সরওয়ার জাহান চৌধুরী জেলা প্রশাসক, নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেন।
শনিবার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, বিষয়টি অবগত হয়ে কয়েকটি গাড়ি জব্দ করে মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে। একটি বিশেষ বাহিনীর উন্নয়ন কাজে ১০ চাকার গাড়ি ব্যবহার করে মাটি বোঝাই করা হচ্ছে। যার ফলে গ্রামীণ সড়ক নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি ওই বাহিনীর দায়িত্বশীলদের অবগত করা হয়েছে। তবুও ভারি যানবাহন নিয়ে মাটি পাচার থামছেনা বলে দাবি করেন এ কর্মকর্তা।