১১:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

আগামী ঈদ স্বদেশে উদযাপন করতে আশায় বুক বেধেছেন রোহিঙ্গারা

  • শ.ম.গফুর::
  • আপডেট সময়: ০৫:২৯:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
  • 36

‘আগামী ঈদ নিজের ভুমিতে উদযাপন করতে পারেন যেনো, সেভাবে প্রক্রিয়া চালাতে সচেষ্ট থাকবো। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটা গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।তেমনি নিজভুমে ফেরার আকুতি নিয়ে শত-সহস্র প্লেকার্ড নিয়ে সমবেত হয়েছিল রোহিঙ্গারা।’ইউএন টেইক আস টু আওয়ার হোম ব্যাক’ সমবেত লাখো মুখের মাঝে এমন আহ্বান সম্বলিত প্লেকার্ড দীর্ঘক্ষণ ছিলো রোহিঙ্গা যুবকের হাতে। শুক্রবার (১৪ মার্চ) উখিয়ায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেসের সামনে নিজ দেশে ফেরার আকুতি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টায় কমতি রাখেনি ওই যুবকের মতো বাংলাদেশে ৮ বছর ধরে আশ্রিত লাখো রোহিঙ্গা।উখিয়ার ২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত ‘সলিডারিটি রামাদান ইফতারে’ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস তার বক্তব্যে সারা বিশ্বকে আবারও মনে করিয়ে দিলেন নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের কথা। বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা কী ধরনের পরিস্থিতির মুখে এখানে এসেছে, তা আমাকে জানিয়েছে। তারা ঘরে ফিরতে চায়। মিয়ানমার তাদের মাতৃভূমি, স্বেচ্ছায় এবং নিরাপদে সেখানে ফিরে যাওয়া হচ্ছে এই সংকটের প্রাথমিক সমাধান।

ইফতারের পরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আপনারা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবকে যে অনুরোধ জানিয়েছেন, আমরা তা গুরুত্বের সঙ্গে তার কাছে উপস্থাপন করছি। আপনাদের যত দ্রুত সম্ভব নিজ দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা যায়, আমরা নিরলসভাবে সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এবার না হলেও আগামী বছর রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ঈদ উদযাপন করতে পারবেন বলে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার কথায় আরাকানের মায়ায় উদগ্রীব রোহিঙ্গারা যেন নতুনভাবে উজ্জীবিত হয়েছেন বাড়ির ফেরার স্বপ্নে। জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্যকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা এবং কক্সবাজারের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
ইফতারে অংশ নিয়ে মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনেছেন উখিয়ার ৪ নং ক্যাম্পের বাসিন্দা রোহিঙ্গা যুবক হামিদ উল্লাহ(২৩)। তিনি বলেন, আমি খুবই ভাগ্যবান এতো বড় আয়োজনে শরিক (অংশ নেওয়া) হতে পেরে। মনে হচ্ছে খুব শীঘ্রই সোনার আরকানে আমরা ফিরতে যাচ্ছি, এখন শুধু স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষা।
রোহিঙ্গা মাঝি (কমিউনিটি নেতা)আবদূর রহিম ও দিল মোহাম্মদের কন্ঠেও ছিলো প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশের বন্দনা। প্রধান উপদেষ্টার ভাষা বুঝতে পেরে খুশি হওয়া রোহিঙ্গাদের অনেকেই বলেন, বাংলাদেশের অবদান রোহিঙ্গাদের কাছে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে, এবারের ঈদটা আমরা খুব আনন্দের সাথে বাংলাদেশি ভাই-বোনদের নিয়ে এখানে শেষ ঈদ হিসেবে উদযাপন করতে চাই।রোহিঙ্গা নেতা ডাক্তার মুহাম্মদ জুবায়ের বলেন, আমরা জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেসের প্রতি ও প্রধান উপদেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ। উনাদের উদারতা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে।
খুব শীঘ্রই রাখাইনে ‘সেইফ জোন’ নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তৎপর হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।শুধু রোহিঙ্গা নয়, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার বক্তব্যকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন কক্সবাজারের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, রোহিঙ্গাদের ভাষার সাথে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার কিছুটা অমিল থাকলেও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া বক্তব্যটি রোহিঙ্গা কমিউনিটির প্রত্যেকটা মানুষ বুঝতে পেরেছেন। এটা খুবই ইতিবাচক। কারণ এ বক্তব্যের মধ্যদিয়ে রোহিঙ্গাদের সাথে একটা সংযোগ তৈরি করতে পেরেছেন প্রধান উপদেষ্টা। যা গত ৮ বছরে দেশী-বিদেশী কোন নেতা করতে পারেননি।

কক্সবাজার হোটেল, গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম শিকদার বলেন, কক্সবাজারের পেশাজীবি এবং রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় যেভাবে বক্তব্য দিয়েছেন, শুনে মনে হয়েছে- কক্সবাজার কিংবা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের কয়েকটি ধাপ এগিয়ে গেছে। কারণ দেশী-বিদেশী কোন নেতার সাথে এভাবে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার সুযোগ অতীতে হয়নি। এরমধ্য দিয়ে বিশ্ব নেতাদের সাথে রোহিঙ্গাদের সরাসরি সংযোগ তৈরির মধ্যদিয়ে তাদের স্বদেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন দ্রুত সম্ভব হবে এমনটাই আশার সঞ্চার হচ্ছে।

Tag :

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

তথ্য সংরক্ষণ করুন

জনপ্রিয়

উখিয়ায় হাসপাতালে স্ত্রী’র লাশ রেখে সন্তান নিয়ে পালালো স্বামী!

আগামী ঈদ স্বদেশে উদযাপন করতে আশায় বুক বেধেছেন রোহিঙ্গারা

আপডেট সময়: ০৫:২৯:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

‘আগামী ঈদ নিজের ভুমিতে উদযাপন করতে পারেন যেনো, সেভাবে প্রক্রিয়া চালাতে সচেষ্ট থাকবো। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটা গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।তেমনি নিজভুমে ফেরার আকুতি নিয়ে শত-সহস্র প্লেকার্ড নিয়ে সমবেত হয়েছিল রোহিঙ্গারা।’ইউএন টেইক আস টু আওয়ার হোম ব্যাক’ সমবেত লাখো মুখের মাঝে এমন আহ্বান সম্বলিত প্লেকার্ড দীর্ঘক্ষণ ছিলো রোহিঙ্গা যুবকের হাতে। শুক্রবার (১৪ মার্চ) উখিয়ায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেসের সামনে নিজ দেশে ফেরার আকুতি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টায় কমতি রাখেনি ওই যুবকের মতো বাংলাদেশে ৮ বছর ধরে আশ্রিত লাখো রোহিঙ্গা।উখিয়ার ২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত ‘সলিডারিটি রামাদান ইফতারে’ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস তার বক্তব্যে সারা বিশ্বকে আবারও মনে করিয়ে দিলেন নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের কথা। বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা কী ধরনের পরিস্থিতির মুখে এখানে এসেছে, তা আমাকে জানিয়েছে। তারা ঘরে ফিরতে চায়। মিয়ানমার তাদের মাতৃভূমি, স্বেচ্ছায় এবং নিরাপদে সেখানে ফিরে যাওয়া হচ্ছে এই সংকটের প্রাথমিক সমাধান।

ইফতারের পরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আপনারা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবকে যে অনুরোধ জানিয়েছেন, আমরা তা গুরুত্বের সঙ্গে তার কাছে উপস্থাপন করছি। আপনাদের যত দ্রুত সম্ভব নিজ দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা যায়, আমরা নিরলসভাবে সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এবার না হলেও আগামী বছর রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ঈদ উদযাপন করতে পারবেন বলে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার কথায় আরাকানের মায়ায় উদগ্রীব রোহিঙ্গারা যেন নতুনভাবে উজ্জীবিত হয়েছেন বাড়ির ফেরার স্বপ্নে। জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্যকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা এবং কক্সবাজারের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
ইফতারে অংশ নিয়ে মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনেছেন উখিয়ার ৪ নং ক্যাম্পের বাসিন্দা রোহিঙ্গা যুবক হামিদ উল্লাহ(২৩)। তিনি বলেন, আমি খুবই ভাগ্যবান এতো বড় আয়োজনে শরিক (অংশ নেওয়া) হতে পেরে। মনে হচ্ছে খুব শীঘ্রই সোনার আরকানে আমরা ফিরতে যাচ্ছি, এখন শুধু স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষা।
রোহিঙ্গা মাঝি (কমিউনিটি নেতা)আবদূর রহিম ও দিল মোহাম্মদের কন্ঠেও ছিলো প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশের বন্দনা। প্রধান উপদেষ্টার ভাষা বুঝতে পেরে খুশি হওয়া রোহিঙ্গাদের অনেকেই বলেন, বাংলাদেশের অবদান রোহিঙ্গাদের কাছে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে, এবারের ঈদটা আমরা খুব আনন্দের সাথে বাংলাদেশি ভাই-বোনদের নিয়ে এখানে শেষ ঈদ হিসেবে উদযাপন করতে চাই।রোহিঙ্গা নেতা ডাক্তার মুহাম্মদ জুবায়ের বলেন, আমরা জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেসের প্রতি ও প্রধান উপদেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ। উনাদের উদারতা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে।
খুব শীঘ্রই রাখাইনে ‘সেইফ জোন’ নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তৎপর হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।শুধু রোহিঙ্গা নয়, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার বক্তব্যকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন কক্সবাজারের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, রোহিঙ্গাদের ভাষার সাথে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার কিছুটা অমিল থাকলেও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া বক্তব্যটি রোহিঙ্গা কমিউনিটির প্রত্যেকটা মানুষ বুঝতে পেরেছেন। এটা খুবই ইতিবাচক। কারণ এ বক্তব্যের মধ্যদিয়ে রোহিঙ্গাদের সাথে একটা সংযোগ তৈরি করতে পেরেছেন প্রধান উপদেষ্টা। যা গত ৮ বছরে দেশী-বিদেশী কোন নেতা করতে পারেননি।

কক্সবাজার হোটেল, গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম শিকদার বলেন, কক্সবাজারের পেশাজীবি এবং রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় যেভাবে বক্তব্য দিয়েছেন, শুনে মনে হয়েছে- কক্সবাজার কিংবা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের কয়েকটি ধাপ এগিয়ে গেছে। কারণ দেশী-বিদেশী কোন নেতার সাথে এভাবে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার সুযোগ অতীতে হয়নি। এরমধ্য দিয়ে বিশ্ব নেতাদের সাথে রোহিঙ্গাদের সরাসরি সংযোগ তৈরির মধ্যদিয়ে তাদের স্বদেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন দ্রুত সম্ভব হবে এমনটাই আশার সঞ্চার হচ্ছে।